ডেস্ক/টিটিভি:
সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথাসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, হবিগঞ্জে এসব মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় কয়েকটি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। মৃতদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত রবিবার রাতে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন আবু হানিফ (৭০)। তাকে মেডিসিন ইউনিট ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে শ্বাসকষ্ট দেখতে পেয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সোয়া ৬টায় তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গাংগেরপুরে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্দি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে থাকা আবু সেক (৭০) গতকাল সকালে মারা গেছেন। তিনি মধুখালী উপজেলার জাহাঁপুর ইউনিয়নের চরমুরাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুর রহমান জানান, ৪ এপ্রিল সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে তিনি ভর্তি হন। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে রবিবার আইসোলেশনে রাখা হয়। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে আবু সেক মারা যাওয়ার পর মধুখালীর জাহাঁপুর ইউনিয়নর চরমুরাদিয়া গ্রামটি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে আবদুর রাজ্জাক (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার রাতে তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। মৃত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তার চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তারকেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
আবদুর রাজ্জাক নারায়ণগঞ্জে চাকরি করতেন। কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, রাজ্জাক আগে থেকেই হাঁপানি রোগে ভুগছিলেন। কয়েকদিন আগে তিনি চাকরিস্থল নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি আসেন। রবিবার সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকালে তার মৃত্যু হয়। তার পরিবারের ধারণা, করোনা আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পানছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গতকাল সকালে শ্বাসকষ্টে এক বৃদ্ধের (৬০) মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রটিতে ২৪২টি পরিবার বাস করেন। সকালে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তার পরিবার জানিয়েছে, তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, পানছড়িতে মারা যাওয়া বৃদ্ধ হাঁপানি রোগে ভুগছিলেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হতে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আবদুল মজিদ (৮০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রাম থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গতকাল মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির বাড়ি থেকে সবাইকে বের না হতে নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে করোনাভাইরাস উপসর্গ হাঁঁচি-কাশি নিয়ে গতকাল দুপুরে শহিদুল ইসলাম নামে এক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ১৮। সে উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুরের আবদুস সাত্তারের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, ১ এপিল হাঁচি-কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন শহিদুল ইসলাম। এরপর তার জ্বর ও প্রচ- গলা ব্যথা শুরু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে করোনা আতঙ্কে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বগুড়া নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত পোশাকশ্রমিকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়ার কিছু উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধা মো. আলীম উল্লাহ (৭১) গতকাল বিকালে মৃত্যুবরণ করেন। তা ছাড়া গত রবিবার রাতে জ্বর-শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২৪ বছর বয়সী এক যুবকের মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য দুজনেরই নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শিলাইগড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণ শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত রবিবার সন্ধ্যায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেদিন রাতে তিনি মারা যান। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, জেনারেল হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া দুজনের মৃত্যু হয়। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর খুলশীতে ওই যুবকের কর্মস্থল সুপার শপ ‘দি বাস্কেট’-এর মালিক, কমর্চারীসহ ৭০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৫ বছর বয়সী এক নারী গতকাল সকালে তার নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তার নাম নিলুফা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুস সালাম সরকার জানান, দীর্ঘদিন ওই নারী হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সোমবার (গতকাল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি শ্বাসকষ্টের কারণে তাদের বাড়িতে মারা যান। করোনা আতঙ্কের কারণে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের উপস্থিতিতে মৃত নারী, তার স্বামী ও দুই সন্তান এবং স্বামীর ভাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. ইসমত আরা জানান, মৃতের স্বামী, দুই সন্তান ও স্বামীর ভাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সেনগ্রাম গ্রামে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গতকাল দুপুরে রুহুল আমিন (৩৫) নামে এক যুবক মারা গেছেন। মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানান, রুহুল আমিন ঢাকায় ট্রাকচালক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা থেকে জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা ও ডায়রিয়া নিয়ে বাড়ি এসে আত্মগোপনে থাকেন। গতকাল দুপুরে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে রুহুল আমিন মৃত্যুবরণ করেন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করোনার কারণে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গতকাল বিকালে করোনা সন্দেহে এক রোগীর ভর্তির পরই মৃত্যু হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি নগরের উপকণ্ঠ তালতলী রাড়িমহলের বাসিন্দা। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি দু-তিন দিন আগে গলা ব্যাথা ও কাশি নিয়ে মেডিকেলের নাক-কান-গলা বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। এরপর বাসায় গিয়ে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল বিকালে জ্বর, গলা ব্যাথা ও কাশি নিয়ে জরুরি বিভাগে এলে তাকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর বিকাল ৫টায় তার মৃত্যু হয়। তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। আজ ওই নমুনা বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। করোনা ওয়ার্ডে সন্দেহভাজন রোগী মৃত্যুর খবর জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে সতর্কতার জন্য ওই বাড়ি লকডাউনের অনুরোধ করা হয়েছে বলে পরিচালক জানান।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরের সিংড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ছয়টি পরিবারকে স্থানীয়ভাবে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টে কারখানা ও রিকশা চালানোর কাজে নিয়োজিত ছয় ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে উপজেলার চামাড়ী, হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের মহিষমারি, বাহাদুরপুর ও নারায়ণপুরে নিজেদের গ্রামে ফিরে আসেন। আসার পরই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে গতকাল তাদের বাড়ির চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই ছয় পরিবারে অন্তত ২১ জন সদস্য রয়েছেন বলে জানান চামাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম।
No comments:
Post a Comment