৪৮ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে বাবার সন্ধান পেলেন সন্তানরা - T-Television Bangladesh

Breaking news

T-Television Bangladesh

POPULAR TV CHANNEL IN THIS WORLD

Sunday, January 19, 2020

৪৮ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে বাবার সন্ধান পেলেন সন্তানরা


ডেস্ক  নিউজ-
দীর্ঘ ৪৮ বছর আগে ১৯৭২ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে ব্যবসা করার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন হাবিবুর রহমান। তার বয়স ছিল তখন ৩০ বছর। বিয়ানীবাজারের মাথিউরার বেজগ্রামে রেখে গিয়েছিলেন চার ছেলে ও স্ত্রী জয়গুন নেছাকে। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। 

তবে দীর্ঘ চার যুগ পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে হাবিবুরকে তার স্বজনেরা ফিরে পেয়েছেন। হাবিবুরের বয়স এখন ৭৮ বছর।

বাড়ি ছাড়ার সময় হাবিবুর রহমানের পরিবারের অবস্থা ভালোই ছিল। স্বামীর রেখে যাওয়া জমিজমা দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন জয়গুন নেছা। এর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। চার ছেলেই বিয়ে করেছেন, আছে নাতি-নাতনি। 

স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকা জয়গুন নেছা মারা যান ২০০০ সালে। পুরোনো বাড়ি ছেড়ে এখন তার পরিবার উঠেছে বিয়ানীবাজার পৌরসভার কসবা গ্রামে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের চার ছেলে। তারা হলেন সাহাবুদ্দিন (৬০), মাহাতাব উদ্দিন (৫৮), জালাল উদ্দিন (৫০) ও আলীম উদ্দিন (৪৮)। তাদের মধ্যে মাহাতাব উদ্দিন ও আলীম উদ্দিন পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকেন। 
সাহাবুদ্দিনের বড় ছেলে তাহির হোসেনও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যে। হাবিবুর রহমানের হারিয়ে যাওয়ার কথা তার পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তারাও বিভিন্নভাবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে হাবিবুর রহমানের নাতি তাহির হোসেনের স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধের ভিডিও দেখতে পান। বিষয়টি তিনি স্বামীকে জানিয়ে বাংলাদেশে পরিবারের স্বজনদের ভিডিওটি কাছে পাঠান। সেই ভিডিওর সূত্র ধরে জালাল উদ্দিন গতকাল শুক্রবার সকালে চলে যান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। জালাল উদ্দিন নিশ্চিত হন, হাবিবুর রহমানই তার হারিয়ে যাওয়া বাবা। 
দীর্ঘদিন পর বাবাকে ফিরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জালাল উদ্দিন।

জালাল উদ্দিন জানান, তার বাবা ৪৮ বছর আগে চট্টগ্রামে যান ব্যবসা করতে। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকে হাবিবুর রহমানের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।

হাসপাতালে জালাল উদ্দিন বলেন, শুনেছি হারিয়ে যাওয়ার পর আমার বাবা মাজারে মাজারে ঘুরেছেন। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজারে বসবাস করতেন। মাজরসংলগ্ন রায়েশ্রী গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া বেগম প্রায় ১২ বছর ধরে নিজের বাবার মতো হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করেছেন। কিছুদিন ধরে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন হাবিবুর রহমান। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিছানা থেকে পড়ে ডান হাতে আঘাত পান তিনি।’

জালাল উদ্দিন বলেন, হাবিবুর রহমানকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন রাজিয়া বেগম। যাকে বাবা বলে ডেকেছেন, তাকে একা ফেলে যেতে মন মানছিল না রাজিয়া বেগমের। হাসপাতালে হাবিবুর রহমানের পাশে চিকিৎসাধীন অন্য এক রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা হয় রাজিয়া বেগমের। পরিচয়ের একপর্যায়ে তাদের হাবিবুর রহমানের হারিয়ে যাওয়া ঘটনা বলেন তিনি। পরে ওই রোগীর স্বজনরাই হাবিবুর রহমানের ভিডিও করে সহযোগিতার জন্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেই আকস্মিক হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পেয়েছি। পরে আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ডান হাতের হাড় ভেঙেছে। অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় তিনি। 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here