নিরেন দাস জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ-
সরকারি বিআরটিএ অফিস ছাড়াও জয়পুরহাট শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যক্তিগত বিআরটিএ অফিস গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী দালাল চক্ররা। অভিযোগ রয়েছে বিআরটিএ র্কর্তৃপক্ষের যোগসাজসেই চলছে তাদের এসব কার্যক্রম। দালাল চক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন বা কোন সেবাই মিলছে না। এতে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে এখানকার বিআরটিএ সেবা প্রার্থীদের। সব জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন। গত বছরের ১ নভেম্বর সড়ক পরিবহনের সংশোধিত আইন কার্যকরের ঘোষণা আসার পর থেকেই যানবাহন চলাচলের ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন করতে জয়পুরহাট বিআরটিএ অফিস মুখী হচ্ছেন চালকরা। অফিসে আসার পর থেকে বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসদাচরণ ও নানা রকমের হয়রানি, ভোগান্তির কারণে চালকরা খুঁজে নিচ্ছেন শহরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের অফিস অথবা স্থানীয় দালালদের। সরকারি ভাবে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২১৯৭ ও অপেশাদারের জন্য ২৮৮৭ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও দালাল চক্ররা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং সিএনজি রেজিস্ট্রেশনে ১১ হাজার ৪৫০টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ২০হাজার টাকার উর্দ্ধে। অন্যান্য সেবা নিতে গেলেও অতিরিক্ত টাকা গুনতেই হয়। এভাবে বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী দালাল চক্র শহরের জিরো পয়েন্টের পৌর মার্কেটের পেঁছনের গলিতে কাজী মোসলেম, সদর রোড সিওকলোনীর বিপ্লব হোসেনসহ আরো কয়েকজন বাসা ও দোকান ভাড়া নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় রীতিমতো বেসরকারি বিআরটিএ দালাল অফিস গড়ে তুলেছেন। তারা অফিসে কয়েকজন সহকারিও রেখেছেন এবং হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসংখ্য দালাল। বিআরটিএ সেবা নিতে আসা পাঁচবিবির মিননুর রহমান, মঠপাড়ার নিত্তানন্দ, গোপীনাথপুরের আব্দুল আহাদ, রায়কালী এলাকার রাকিবুল ইসলাম, ক্ষেতলাল বারুইন গ্রামের জহুরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, দালালকে ঘুষ দিয়ে আমাদের লাইসেন্সের কাগজ প্রসেস করতে হয়েছে। আমরা যখন বিআরটিএ অফিসের গিয়ে কোন বিষয়ে জানতে চাইলে, ওদের আচরণ দেখলে মনে হয় যে ওরাই মালিক পক্ষ। তারা আমাদের মানুষই মনে করে না। তারা চায় আমরা দালালদের মাধ্যমে এখানে আসি। দালালদের কাছে টাকা দিলে আমাদের আর কোন চিন্তা থাকে না। বারবার হয়রানি বা ভোগান্তিতেও পড়তে হয়না। পরীক্ষাতে ফেল করলেও দালালরা পাশ করে দেয়। দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা চুক্তিতে করলেই শুধুমাত্র পরীক্ষা ও ফিঙ্গারের দিন উপস্থিত হলেই চলে। তাদের মাধ্যমে না করলে বারবার পরীক্ষা দিয়েও ফেল হয়। এজন্য দালালদের মাধ্যমে সহজেই আমাদের কাজটা পার হয়ে যায়। দালাল চক্রের সদস্য কাজী মোসলেমের অফিসের পাশের দোকানদার শুভ বলেন, বিআরটিএ অফিসের কার্যক্রম জয়পুরহাটের পৌর মার্কেটের পেছনের এই গলিতে হয়। এটা একটা প্রকৃতই দালালি। বিআরটিএ’র যে কর্মকর্তারা আছে উনারা এখানে বসে অফিস করে। এখানে তাদের প্রতিনিয়তই যাতায়াত হয়। সকল নাগরিকরা বিআরটিএ অফিসের সেবা পাবে। কিন্তু বিআরটিএ সেবা দেখি দালালের মাধ্যমে তারা এই গলির অফিসেই দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা অবিলম্বে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং জবাবদিহিতামূলক বিচার চাই। এদিকে মুঠোফোনে দালাল চক্রের সদস্য বিপ্লব হোসেন সিএনজির লাইসেন্সের জন্য ২০ হাজার টাকা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সাড়ে ৯ হাজার টাকার কথা প্রকাশ করলেও স্বাক্ষাতে জানান, বিআরটিএ’র অফিসাররায় এসব অতিরিক্ত টাকা নেন। দালাল চক্রের অন্য সদস্য কাজী মোসলেমের অফিসে গেলে শত শত বিআরটিএ ফরম ও বিভিন্ন কাগজপগত্র দেখা যায়। এসব কাজের ব্যাপারে অনুমতি থাকার কথা জানতে চাইলে তিনি শুধু ফরম পূরণ করে দেন বলে দ্রুত সটকে পড়েন। দালাল চক্ররা একজনেই প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি কাজ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএ পরিদর্শক এস.এম ফরিদুর রহিম বলেন, যেটা হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যাপারে এডি (সহকারী পরিচালক) স্যার জানেন। জয়পুরহাট সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, বিআরটিএ দালালদের ব্যাপারে সংবাদ পেলেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অথবা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সক্রিয় দালাল চক্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজের অপারকতা জানিয়ে বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) আব্দুল হান্নান বলেন, তাদেরকে ধরিয়ে দিন। গত দুই মাস মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না পারায় আমাকে ডিডি অফিসে কথা শুনতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেই জনগণের সাথে প্রতারণা করবে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
No comments:
Post a Comment